সনাতন হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন প্রতীকের অর্থ এবং গুরুত্ব

সনাতন হিন্দুধর্ম একটি প্রতীকসমৃদ্ধ ধর্ম। এখানে প্রতিটি ধর্মীয় চিহ্ন গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। মন্দির থেকে শুরু করে পবিত্র গ্রন্থ পর্যন্ত,বিভিন্ন সনাতন হিন্দু প্রতীক  দেবত্বের শক্তি, মহাজাগতিক সত্য এবং দার্শনিক চিন্তাভাবনাকে প্রকাশিত করে। কিন্তু এই প্রতীকগুলোর প্রকৃত অর্থ কী?  আসুন, হিন্দু ধর্মের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক এবং তাদের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।


{tocify} $title={Table of Contents}

সনাতন হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন প্রতীকের অর্থ এবং গুরুত্ব

সনাতন হিন্দুধর্মের বিভিন্ন প্রতীক শুধুমাত্র অলংকার বা চিত্র নয়; এগুলো গভীর আধ্যাত্মিক শিক্ষা বহন করে। প্রতিটি প্রতীক আমাদের আত্মজ্ঞান, জীবনের ভারসাম্য এবং দেবতার সাথে সংযোগ স্থাপনের পথ দেখায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক হিন্দু ধর্মের চিহ্ন গুলি সম্পর্কে। 

$ads={1}

মহাবিশ্বের ধ্বনি (ॐ)

ওঁ হল,সনাতন হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র প্রতীক, যা অনাদি কালের মহাজাগতিক কম্পনকে প্রকাশিত করে।এই ওমকার থেকেই সমগ্র সৃষ্টি প্রকাশিত,ও এই ওমকারেই লয়। এই ওমকার তিনটি ধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত: অ (সৃষ্টি), উ (সংরক্ষণ), এবং ম (বিনাশ), যা মূলত ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর,এই ত্রিদেবতাকে প্রতিনিধিত্ব করে। ওমকারের ধ্বনি আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষকারী,ও পরম সত্য ব্রহ্মের নিকট আমাদের পৌছে দেয়। শব্দরূপ ব্রহ্মের প্রকাশের মূলই হল ওম।

স্বস্তিক – শুভতার প্রতীক

স্বস্তিক একটি প্রাচীন সনাতন হিন্দু প্রতীক, যা মূলত উন্নতি, সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি এবং সুরক্ষাকে প্রকাশিত করে। এটি চারটি বাহু বিশিষ্ট, যা জীবনের চারটি মূল স্তম্ভ বা চতুর্বর্গকে প্রতিফলিত করে: ধর্ম (নীতিবোধ), অর্থ (ধনসম্পদ), কাম (ইচ্ছা) এবং মোক্ষ (মুক্তি)।   স্বস্তিক চিহ্ন,আমাদের জীবনের  ভারসাম্য, ইতিবাচকতা এবং শ্রীবিষ্ণু ও দেবী মহালক্ষ্মীর আশীর্বাদকে প্রতিফলিত করে।  

ত্রিশূল – ভগবান শিবের অস্ত্র

ত্রিশূল (ত্রিশূল) ভগবান শিবের পবিত্র অস্ত্র, যা অজ্ঞতা, অহংকার ও কামনাকে বিনাশ করে৷ ত্রয় শূলঃ নির্মূলনং শূলপাণিং, আমাদের জীবনের আধিদৈবিক, আধিভৌতিক ও আধ্মাত্মিক, এই তিন প্রকার শুল বা দুঃখ বিনাশ করেন ত্রিশূল। এটি তিনটি শীর্ষ বিশিষ্ট, যা তিনটি গুণ (সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ)এবং সৃষ্টির তিনটি মৌলিক দিক সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও সংহারকেও বোঝায়। ত্রিশূল আমাদের শেখায় যে আত্মনিয়ন্ত্রণ, জ্ঞান ও বৈরাগ্যের মাধ্যমে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব,ঈশ্বরের নিকট পৌছানো সম্ভব।

পদ্ম – পবিত্রতা ও আত্মদীক্ষা

পদ্ম কাদার মধ্যে জন্মালেও, তার সৌন্দর্যতা অত্যন্ত মনোগ্রাহী। কথায় আছে পাকের মধ্যে পদ্মফুল।এই পদ্মফুল,হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক, যা প্রধানত পবিত্রতা, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং আত্ম চেতনার উন্মেষের প্রতীক।  পদ্মফুল দেবী লক্ষ্মী (সমৃদ্ধি ও পবিত্রতা) এবং ব্রহ্মা (সৃষ্টি ও জ্ঞান)  ও আমাদের হৃদয়(হৃদয়পদ্ম) এর সাথে সম্পর্কিত। এটি আমাদের শিখায় যে আত্ম পবিত্রতা রক্ষার দ্বারা,প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আত্মশক্তি ও সৌন্দর্যের বিকাশ সম্ভব।
$ads={2}

তিলক – জ্ঞানের তৃতীয় চক্ষু

সনাতনী হিন্দুদের কপালের তিলক, ব্রহ্মচেতনার প্রকাশকারী তৃতীয়চক্ষুকে নির্দেশ করে বা,বলা যায় জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক জাগরণের কেন্দ্রকে প্রতিফলিত করে। বিভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের নিজস্ব তিলকের ধরন রয়েছে, যা তাদের উপাস্য দেবতা বা ঐতিহ্যকে নির্দেশ করে।  তিলক আসলে আধ্যাত্মিক চতনার উন্মেষ, অন্তর্দৃষ্টি এবং মহাজাগতিক শক্তির সাথে সংযোগের প্রকাশ 

শঙ্খ – দেবত্বের ধ্বনি  

শঙ্খ, যা পূজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাজানো হয়,তার ধ্বনি ওমকারের মতই পবিত্র। ওঁকার ধ্বনি,  মহাজাগতিক শক্তির প্রতীক। শঙ্খধ্বনি পরিবেশকে শুদ্ধ করে, নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং দেবতার আশীর্বাদ আহ্বান করে।  শুধু তাই নয়,শঙখ বাজানোতে মানুষের হৃদপিন্ড মজবুত থাকে।
Sri Sibaprosad

Sri Sibaprosad Mukhopadhyay, a devoted Hindu priest, shares mantras, stotras, and shastra knowledge by this website and his Youtube Channel & Facebook Page named "Sri Sibaprosad". Aiming to connect every Hindu with Sanatan Dharma.

Post a Comment

Previous Post Next Post